পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও। - edu bangla online

পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও।

সাধারণভাবে আমরা পৃথিবীর আকৃতি গোলকাকার বললেও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা এবং মহাশূন্য থেকে তোলা ছবি থেকে জানা গেছে যে পৃথিবীর আকার ঠিক গোলকাকার নয়

পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও


উত্তর : সাধারণভাবে আমরা পৃথিবীর আকৃতি গোলকাকার বললেও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা এবং মহাশূন্য থেকে তোলা ছবি থেকে জানা গেছে যে পৃথিবীর আকার ঠিক গোলকাকার নয়, এর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু প্রদেশ চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত।

আমরা জানি, যেসব গোলাকার বস্তুর উত্তর ও দক্ষিণ দিক সামান্য চাপা এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিক সামান্য ফোলা তাকে অভিগত গোলক বলে।

পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও।
পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও।


সুতরাং পৃথিবীর আকৃতিও অভিগত গোলকের ন্যায়। এর সপক্ষে প্রধান প্রমাণগুলি হল-

আরো পড়ুন : পৃথিবীর গোলকাকার আকৃতির প্রমাণগুলি লেখো

১)পৃথিবীর নিরক্ষীয় ও মেরু ব্যাস: 

হিসাব করে দেখা গেছে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস 12,757 কিমি এবং মেরু ব্যাস 12,714 কিমি। এর থেকে প্রমাণ হয় যে উত্তর-দক্ষিণে মেরু অঞ্চল অপেক্ষা পূর্ব-পশ্চিমে নিরক্ষীয় অঞ্চল (12757 1271443) 43 কিমি বেশি ফোলা।


পৃথিবীর আকৃতি উপবৃত্তাকার
পৃথিবীর আকৃতি উপবৃত্তাকার


২) কোনো বস্তুর ওজনের পার্থক্য: 

পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলক বলে মেরু অঞ্চল নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের নিকট অবস্থিত। সেইজন্য মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় বেশি। আর এই কারণেই কোনো বস্তুকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ওজন করার পর তাকে আবার মেরু অঞ্চলে ওজন করলে বস্তুর ওজন নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় বেশি হয়।


৩) পৃথিবীর আবর্তন গতি :

কোনো নরম গোলাকার বস্তুকে (যেমন-মাখা ময়দা, কাদার মন্ড) খুব জোরে ঘোরালে কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তির প্রভাবে গোলকটির মধ্যভাগ স্ফীত ও উপর-নীচ দুই তল সামান্য চাপা হয়ে থাকে। জন্মলগ্নে পৃথিবী যখন উত্তপ্ত নমনীয় অবস্থায় ছিল তখন আবর্তন গতির প্রভাবে পৃথিবীর আকৃতিও অভিগত গোলকের রূপ নিয়েছে।


৪) নক্ষত্রের উন্নতি কোণের পার্থক্য: 

নিরক্ষরেখা থেকে কোনো নক্ষত্রকে আকাশের যে স্থানে দেখা যায়, উত্তরে বা দক্ষিণে 111 কিমি অগ্রসর হলে সেই নক্ষত্রকে 1° সরতে দেখা যায়। কিন্তু মেবু বিন্দু থেকে যে-কোনো দিকে ওই একই দূরত্ব অগ্রসর হলে কোনো নক্ষত্রকে 1°-এর কম সরতে দেখা যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চল সামান্য চাপা।


৫) ঘড়ির সময়ের পার্থক্য: 

1671 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী জন রিচার্ড তাঁর 1.5 মিটার লম্বা পেন্ডুলামযুক্ত ঘড়িটি যা প্যারিস শহরে (49° উত্তর) সঠিক সময় দিত সেটিকে নিয়ে যখন নিরক্ষীয় অঞ্চলের কেইন দ্বীপে (0°) যান তখন লক্ষ করেন ঘড়িটি 2½ মিনিট ধীরে চলছে। ঘড়িটির সময় ঠিক করতে তিনি পেন্ডুলামটিকে ¼ ইঞি ছোটো করে দেন। -এই ঘটনার 16 বছর পর নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে এই বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের কেইন দ্বীপে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব প্যারিস শহরের তুলনায় কম হওয়ায় ঘড়িটি ধীরে চলত। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কম এবং মেরুর দিক ক্রমশ চাপা তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বেশি।


৬) পৃথিবীর বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য: 

1736-37 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের 'রয়‍্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স' কুইটো শহর (০° অক্ষাংশ), প্যারিস (49° উত্তর অক্ষাংশ) এবং ল্যাপল্যান্ড (66½° উত্তর)- এই তিনটি স্থানে পৃথিবীর পরিধির এক একটি নির্দিষ্ট চাপের (Arc of diameter) দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে। দেখা যায়, কুইটো শহরে এই চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং অন্য দুই শহরে চাপের দৈর্ঘ্য ক্রমান্বয়ে বেশি। ল্যাপল্যান্ডে চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণ হল, মেরু অঞ্চল অপেক্ষাকৃত চাপা এবং কুইটো শহরে চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম হওয়ার কারণ হল নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত।


পরিমাপ করে দেখা গেছে কোনো দ্রাঘিমারেখার ওপর 1 ডিগ্রি অক্ষাংশের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নিরক্ষীয় অঞ্চলে 110.57 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে 111.7 কিমি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, পৃথিবীপৃষ্ঠের বক্রতা নিরক্ষীয় অঞ্চলে বেশি, মেরু অঞ্চলে কম।


৭) কৃত্রিম উপগ্রহের প্রদক্ষিণ: 

কৃত্রিম উপগ্রহগুলির প্রদক্ষিণ থেকেও লক্ষ করা গেছে যে প্রদক্ষিণকালে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি নিরক্ষরেখার উপর এলে তা প্রদক্ষিণ বৃত্তের বাইরে চলে যায় এবং মেরু অঞ্চলে প্রদক্ষিণ বৃত্তের ভিতরে ঢুকে পড়ে। পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার হলে এরূপ হত না।


উপরিউক্ত প্রামাণ্য তথ্যগুলির সাহায্যে আমরা জানতে পারি পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মতো।

Post a Comment